সকল প্রবাসীদের বীমা
সকল প্রবাসীদের বীমাঃ-
বছরে প্রিমিয়াম আসবে হাজার হাজার কোটি টাকা।
Published: 2019-06-09 / 11:05
মোঃ মাসুম আলি: সৌদি প্রবাসীদের বীমার আওতায় আনা গেলে বছরে প্রিমিয়াম আসবে ১ হাজার ৭৩৪ কোটি ২ লাখ টাকা। বাংলাদেশ দূতাবাসকে দেয়া সৌদি আরবের দু’টি বীমা প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবিত প্রিমিয়াম হার হিসেব করে এ চিত্র উঠে এসেছে। অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সৌদি আরবে বাংলাদেশের ২২ লাখ নাগরিক কর্মরত। এ ছাড়াও প্রতি মাসে ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজের সন্ধানে দেশটিতে পাড়ি জমাচ্ছেন। যাদের ৭০ শতাংশ পুরুষ এবং ৩০ শতাংশ নারী। বিগত ৪৫ বছর ধরেই বীমা সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই রেমিটেন্স যোদ্ধারা।
এর ফলে দুর্ঘটনা, মৃত্যু, স্বাস্থ্যহানী ও আর্থিক ঝুঁকিসহ নানান সমস্যায় জর্জরিত দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড খ্যাত এই রেমিটেন্স যোদ্ধা এবং তাদের পরিবার। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সৌদি প্রবাসী শ্রমিকদের বীমার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
জানা গেছে, সৌদি প্রবাসী এসব শ্রমিককে বীমার আওতায় আনার উদ্যোগ নিলেও দেশটিতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বীমা কাভারেজ দেয়ার সুযোগ নেই। তবে অংশীদারীর মাধ্যমে এই বীমা কাভারেজ দেয়া যাবে। এ অবস্থায় গত ফেব্রুয়ারিতে সরকারের একটি প্রতিনিধি দল সৌদি আরব সফর করেছে।
প্রবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সুরক্ষায় বীমা পলিসি চালু করতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস। এরই প্রেক্ষিতে সৌদি এরাবিয়ান কো-অপারেটিভ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি (এসএআইসিও) এবং বুর্জ কো-অপারেটিভ ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশি শ্রমিকদের লাইফ ও স্বাস্থ্য বীমা কভারেজ দেয়ার প্রস্তাব করেছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সৌদি এরাবিয়ান কো-অপারেটিভ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য গ্রুপ পার্সোনাল এক্সিডেন্ট ইন্স্যুরেন্সের একটি প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবনা অনুসারে বীমা অঙ্ক হবে ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল, যা বাংলাদেশি টাকায় দাঁড়ায় ১১ লাখ ১৮ হাজার টাকা (১ রিয়াল = ২২.৩৬ টাকা) ।
এক্ষেত্রে জনপ্রতি প্রিমিয়াম প্রস্তাব করা হয়েছে বার্ষিক ২৫০ সৌদি রিয়াল, যা বাংলাদেশি টাকায় দাঁড়ায় ৫ হাজার ৫৯০ টাকা। আর দু’বছর মেয়াদী হলে এর প্রিমিয়াম হার ৫০০ রিয়াল বা ১১ হাজার ১৮০ টাকা। ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সীরা এ বীমার আওতায় আসতে পারবেন।
অন্যদিকে বুর্জ কো-অপারেটিভ ইন্স্যুরেন্সের প্রস্তাব অনুসারে, ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সীরা স্বাস্থ্য বীমা নিতে পারবে। ডমেস্টিক লেবার হেলথ ইন্স্যুরেন্স নামক এ বীমার মেয়াদ দু’বছর। বীমা অঙ্ক সর্বোচ্চ ১০ হাজার রিয়াল বা ২ লাখ ২৩ হাজার ৬শ’ টাকা। এ জন্য বীমা গ্রাহককে ২০৫ রিয়াল বা ৪ হাজার ৫৮৪ টাকা প্রিমিয়াম গুণতে হবে।
অর্থাৎ লাইফ বীমা ও স্বাস্থ্য বীমা কভারেজ নিতে হলে একজন গ্রাহককে বছরে প্রিমিয়াম দিতে হবে গড়ে ৩৫৩ সৌদি রিয়াল। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্য ৭ হাজার ৮৮২ টাকা। সে হিসাবে সৌদি প্রবাসী ২২ লাখ বাংলাদেশির কাছ থেকে বছরে প্রিমিয়াম আসবে ১ হাজার ৭৩৪ কোটি ২ লাখ টাকা।
আইডিআরএ’র নির্বাহী পরিচালক কাজী মনোয়ার হোসেন জানান, সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের বীমার আওতায় আনতে গত ফেব্রুয়ারিতে ৬ দিনের সফর করেছে সরকারের ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল। সেখানে সৌদি বীমা প্রতিষ্ঠান এসএআইসিও’র সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনার কথা থাকলেও তা হয়নি।
কাজী মনোয়ার হোসেন বলেন, সৌদি আরবের নিয়ম-নীতি কড়া। বাংলাদেশি কোন বীমা কোম্পানি সেখানে সরামরি ব্যবসা করার সুযোগ নেই। সেদেশের কোন কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারীর ভিত্তিতে বীমা কার্যক্রম চালাতে হবে। এতে বিরাট অংকের প্রিমিয়াম তাদের হাতে চালে যাবে, যা আমরা চাচ্ছি না। তাই নতুন করে যারা সৌদি আরবে যাবে তাদের বীমা আমরা এখান থেকেই দিতে চাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, সৌদি বীমা কোম্পানি এসএআইসিও প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য জীবন বীমার প্রস্তাব করেছে। তবে তাদের প্রিমিয়াম হার বেশি বলে মনে হয়েছে। আমরা আরো কমে প্রবাসীদের বীমা সুবিধা দিতে চাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে উভয়ের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। তাদের বক্তব্য আমরা শুনেছি। এখন আমাদের আন্ত:মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
Comments
Post a Comment